স্মিতা

শীত (জানুয়ারী ২০১২)

তানজির হোসেন পলাশ
  • ২২
  • 0
  • ৪৪
স্বপি্নল ভিলা। স্বপ্ন ঘেরা মানুষের আনাগোনা যে বাড়িতে। ঐ বাড়িতেই ভাড়া থাকে ক্ষণিকের নিকট আত্মীয় পরিচয়ে একজন। বাড়িটার আশে পাশে ক্ষণিকের পদচারণা ঘটে প্রত্যহ। কিন্তু ইচ্ছা করে না স্বপি্নলে ঢুকতে। হয়ত স্বপ্নেরা হারিয়ে গেছে চিরতরে। নতুবা খুঁজে পেয়েছে স্থায়ী নিবাস।
সোমবার। গোধুলী লগ্নে পদার্পণ করেছে সূর্য। ঘড়ির কাঁটা ৬টা ২৫মিনিটের ঘোষণা দিচ্ছে। স্বপি্নল ভিলার সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষণিক। হঠাৎ মনের মধ্যে জাগ্রত হল স্বপ্নের ঠিকানা খুঁজে পাবার বাসনা। স্বপি্নল ভিলার সিঁড়ি দিয়ে উঠতে থাকে উপরে। গন্তব্য চতুর্থ তলা। যেখানে অবস্থান করে ক্ষণিকের দুর সম্পর্কের চাচা। অনেকদিন পর ঐ বাসায় দেখা যায় ক্ষণিককে। খুব ইতস্তত বোধ করে ক্ষণিক। চতুর্থ তলার শেষ সিঁড়িতে পা রাখতেই হৃদয়ে কম্পন দিয়ে সাড়া দেয় ঘুমন্ত স্বপ্নেরা। থমকে দাঁড়ায় ক্ষণিক। সামনে তাকায়। চোখের সামনে যেন চমকপ্রদ আলোর ঝলকানী। হৃদয়ের স্বপ্নকন্যা মুহূর্তে মিশে যায় সামনে দাঁড়ানো অনন্য রূপোসিনীর সাথে। ক্ষণিকের স্বপ্নকন্যাও হার মানে মেয়েটির কাছে। কেন নয়? সুগন্ধি মাখা চুল তার বৈশাখী ঝড়ে এলোমেলো হাওয়ায় প্রতিবাদমূখর সজ্জিত কালো মেঘের ভাঁজ। চোখের ভাষা বুঝবার আগেই সহস্র হৃদয়ে খরস্রোতা নদীর ভাঙ্গনের ঢেউ খেলে। নাসিকা তার সুরহীন বাঁশির ঘুমন্ত অবয়ব। বিধাতার রাজ্যের অজস্র গোলাপ পাপড়ির সেরাটি রাখতে ভুল হয়নি তার ঠোঁটে। বরং ভোমরাদের প্রতীক্ষায় রাখতে মধু মাখিয়েছেন কিঞ্চিৎ বেশি।
নিমিষেই রূপোবতী চোখের আড়াল হয় ক্ষণিকের। পলকহীন তাকিয়ে থাকে কয়েক মুহূর্ত পাশের ফ্লাটের দরজায়। বিদু্যৎবেগে দরজা লেগে যায়। একেবারে ক্ষণিকের হৃদয়ে আঘাত করে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে টিপ দেয় কলিং বেল। ভেতর থেকে কণ্ঠ ভেসে আসে ক্ষণিকের ছোট মার। ওরা অবশ্য ছোট চাচীকে ছোট মা বলেই ডাকে।
: কে?
গলা শুকিয়ে গেছে ক্ষণিকের। কিছুই বলতে পারে না ও। নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে। সাড়া শব্দ না পেয়ে লুকিং গ্লাস দিয়ে তাকিয়ে দেখেন ক্ষণিকের ছোট মা মেরিনা পারভীন। দরজা খুলে ক্ষণিককে আসতে বলেন। কিন্তু ক্ষণিকের কান পর্যন্ত পেঁৗছায় না সে শব্দ। ক্ষণিকের অবস্থা দেখে হাত ধরে টান দিয়ে ভেতরে আনেন। তারপর বলেন,
: এতদিন পর বাবাজির মনে পড়ল এই মায়ের কথা।
: বারে, কেন মনে পড়বে না? এই পথ দিয়ে যাবার সময় তো প্রতিদিনই আপনার জানালার পানে একবার করে তাকাই। অবশ্য বড্ড মনে পড়ে আপনার শুটকি রান্নার কথা। কিন্তু উপায় কি আর বলুন, কী করে জানবো আজ শুটকি রান্না হয়েছে?
: ইস্ রে, আগে থেকে আমাকে জানালে আমি শুটকি রান্না করতাম।

কলিং বেলের শব্দ। এই অসময় আবার কে এল? বিরক্ত হয়ে মেরিনা পারভীন দরজা খুলতে গেলেন। ক্ষণিক ঠাট্টা করে বলে,
: দেখুন কেউ আবার শুটকি নিয়ে এল কি না।
দরজা খুলতেই রূপোসিনী তরকারীর বাটি হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
: আম্মা চিটাগাং থেকে শুটকি এনেছেন। নিজেই রান্না করেছেন। আপনার প্রিয় বলে দিতে এলাম।
: ঠিক সময়েই এসেছেন। এদিকে আসুন।
মেরিনা পারভীন এক প্রকার টেনে হিঁচড়ে ঘরের ভেতরে নিয়ে আসেন রূপোসিনীকে। পরিচয় করিয়ে দেয় ক্ষণিকের সাথে।
: এ আমার ছেলে ক্ষণিক। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় মাস্টার্স করছে। শুটকি ওর খুব প্রিয় খাবার। এই মাত্র আমরা শুটকি নিয়েই আলাপ করছিলাম।
পরিচয় করিয়ে দিয়ে ছোট মা মেরিনা পারভীন রান্না ঘরে গেলেন। ক্ষণিক আর ক্ষণকাল পূর্বে দেখা রূপোসিনী। ক্ষণিক যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। ও সমস্ত ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কথা বলতে পারছে না। বেশ সময় চেষ্টা করে সবে জিজ্ঞাসা করছে-
: আপনার পরিচয় কিন্তু জানা হয়নি।
আমতা আমতা করে রূপোসিনী বলে-
: আমি নাজু ইসলাম। গ্রামের বাড়ি চিটাগাং। বেশ কিছু দিন যাবৎ এই ফ্লাটে আছি। বসে থাকার চেয়ে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টায় কবি নজরুল কলেজে সময় কাটাতে যায়।
: আপনি বেশ চমৎকার। কিন্তু এই চমৎকার সৃষ্টির নাম তো নাজু ইসলাম একেবারেই বেমানান।
নাজু ইসলাম কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল-
: আমার বাবা-মা দিয়েছেন তো!
: কিছু মনে না করলে আমি আপনার একটি নাম দিতে চাই।
: জি্ব বলুন।
: আপনার নাম হওয়া উচিৎ স্মিতা।
স্মিতা নাম শোনার সাথে সাথে মেয়েটি আর এক মুহূর্ত দেরি না করে সোজা নিজের ফ্লাটে চলে গেল। মেয়েটি কি মনে করেছে তা ক্ষণিকের ভাববার সময় নেই। ও মেয়েটাকে স্মিতা বলেই ডাকবে এক রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। স্মিতা সম্পর্কে ছোট মায়ের কাছে আরো অনেক তথ্য নিয়ে সেদিনের মত বিদায় নিল ক্ষণিক। বিদায়ের আগে শুটকি খেতে ভুল করে নাই।

প্রায় প্রতিদিনই ক্ষণিককে দেখা যায় স্বপি্নল ভিলায়। মাঝে মাঝে কথা হয় ওর স্বপ্নকন্যার সাথে। ছোট মাকে দিয়ে খবর পাঠায় নাজু ইসলামের কাছে। এরই মধ্যে অবশ্য ক্ষণিক স্মিতা বলে ডাকার অনুমতি নিতে চেয়েছে। এতে ঘোর আপত্তি নাজু ইসলামের। কিন্তু ক্ষণিক নাছোড় বান্দা।
ক্ষণিকের মন আজ খুব বিষণ্ন। স্মিতার সাথে দেখা হয়নি। ছোট মাকে বলে এসেছে স্মিতা যেন ক্ষণিককে ফোন দেয়। সন্ধ্যার পর থেকে অপেক্ষায় থাকে ক্ষণিক। কখন আসবে স্মিতার ফোন। অস্থির মনকে কিছুতেই থামাতে পারছে না ক্ষণিক। বারবার মোবাইল পরীক্ষা করে দেখছে বন্ধ হয়ে গেছে কিনা। কোন সমস্যা নেই। অপেক্ষা করতে করতে বেশ ক্লান্ত হয়ে যায় ক্ষণিকের চোখ। তবুও বিছানায় যায় না ক্ষণিক। যদি স্মিতার ফোন আসে আর ও ঘুমিয়ে যায় এই ভেবে চেয়ারে বসে মাথাই হাত রেখে গান শোনে।
রাত ১২টা ০৫ মিনিট। চারিদিক নিরব, নিস্তব্ধ। ঝিঁঝিঁ ডাকার শব্দও কানে আসছে না। খুব আস্তে আস্তে গান বাজছে "তুমি কি সেই আগের মত আছো, নাকি অনেক খানি বদলে গেছো? খুব জানতে ইচ্ছে করে। ........." এর সাথে সুর মিলিয়ে বেজে ওঠে রিং টোন "বেদনা মধুর হয়ে যায়, তুমি যদি দাও .........."। চমকে ওঠে ক্ষণিক। চোখ থেকে ঘুম পালিয়ে যায়। মোবাইলটা হাতে নেয়। অপরিচিত নম্বর। ভাবে নিশ্চয় স্মিতা। তাড়াতাড়ি রিসিভ করে।
: হ্যালো। হ্যালো।
অপর পাশ হতে কোন কথা শোনা যায় না। শুধু নি:শ্বাসের শব্দ শোনা যায়। ক্ষণিক আবার বলে-
: হ্যালো। প্লিজ কথা বলুন। আপনি কে বলছেন? আপনি কি স্মিতা মানে নাজু ইসলাম?
এক মিনিট অতিবাহিত হয়ে গেছে। ওপাশ থেকে কোন কথা শোনা যায় না। রাগে ক্ষণিকের শরীর ঘেমে উঠেছে। কিছুক্ষণ পরে পুরুষ কণ্ঠের একটি আওয়াজ ভেসে ওঠে-
: দু:খিত ভাইজান। খুব চমৎকার গান সেট করেছেন। শোনার জন্য কল দিছিলাম। ঘুম ভাঙানোর জন্য সরি।
শুরু হয় ক্ষণিকের ধৈর্যের পরীক্ষা। মনে যা আসে সব কিছু উজার করে বকা ঝকা করে মোবাইলের অপর পাশে কান পাতা ব্যক্তির প্রতি। অথচ সেই কখন লাইন কেটে দিয়েছে বেচারা। ওদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই ক্ষণিকের।
একটু পর আবার ফোন। এবারও অপরিচিতি নম্বর। ক্ষণিক ফোন রিসিভ করেই-
: এই ব্যাটা। বার বার ফোন করিস কেন?
বলতে না বলতেই বোকা বনে যায় ক্ষণিক। মেয়েলী কণ্ঠের আওয়াজ ভেসে আসে-
: ক্ষণিক বলছেন?
: জি্ব বলছি। আপনাকে তো চিনতে পারছি না।
: আমি নাম না জানা অপরিচিতা।
: হেয়ালী রেখে খুলে বলুন প্লিজ, কে আপনি?
: নিজেই তো নাম বদলে দিয়েছেন। কি পরিচয় দিবো বলুন।
: মানে! আপনি স্মিতা।
: আমি স্মিতা নয়। শুধু আপনার জন্য স্মিতা।
: সত্যিই আমি ভীষণ খুশি আপনার ফোন পেয়ে। আজ আমি বিধাতাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনার সাথে কথা বলতে পেরে। আপনার কোন আপত্তি নেই তো।
: আপনার ইচ্ছাকে কি আমি আপত্তি করতে পারি। তবে ..........।
: বলুন না।
: আপনার সাথে আমি শুধু ফোন বন্ধুত্ব করতে চাই। সুতরাং আমি চাই না, আপনি কারো সামনে আমাকে স্মিতা বলে ডাকেন।
: ঠিক আছে মানলাম। আমারো একটি শর্ত আছে।
: কি শর্ত শুনি।
: মানবেন কিনা আগে বলতে হবে।
: না শুনলে কি করে কথা দিব?
: কথা দিয়েই দেখুন না।
: কথা দিয়ে যদি রাখতে না পারি।
: পারবেন। অবশ্যই পারবেন। আমি এমন কোন শর্ত দিয়ে আপনাকে বাঁধবো না, যাতে আপনার বড় ধরনের অসুবিধা হয়।
: ঠিক আছে কথা দিলাম।
: ফোনে আমার সাথে তুমি করে বলতে হবে।
: এই কথা। বন্ধুকে তো তুমি করে বলতেই হবে।
অনেক রাত পর্যন্ত কথা চলল ওদের। প্রায় প্রতি রাতেই ওরা কথা বলে। ওদের ফোন আসে রাত ১২টার পর।

শীত যখন কুয়াশার চাদর গায়ে আমাদের চারিপাশে আনাগোনা করে, তখন খেঁজুরের রসের পিঠা খাওয়ার আমেজ সকলের জানা। শীতকালীন ছুটিতে স্মিতা গ্রামের বাড়িতে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্ষণিককে জানাতে ভয় পাচ্ছে স্মিতা। যদি ক্ষণিক ওর সাথে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়। ওকে তো বাধা দিতে পারবে না। তাছাড়াও স্মিতা বুঝতে পারল ক্ষণিককে তার জীবনের সব ঘটনা খুলে বলা দরকার। ভালোবাসার কথা না বললেও ক্ষণিক যে স্মিতাকে ভালোবেসে ফেলেছে তা বুঝতে বাকি নেই স্মিতার। এর আগে অবশ্য ইশারা ইঙ্গিতে ক্ষণিক ভালবাসার কথা বোঝাবার চেষ্টা করলেও স্মিতা পাত্তা দেয়নি। এভাবে আর কত দিন? ছেলেটার জীবন নষ্ট করে ওর কি লাভ? এসব চিন্তার ফলশ্রুতিতে স্মিতা অসময়ে ক্ষণিককে ফোন দেয়।

ঘড়ির কাঁটায় ভোর ৫ টা হলেও নিজেকে ছাড়া আর কাউকে অনুমান করতে পারছে না বুড়িগঙ্গা সেতুর উপর অপেক্ষায় থাকা ক্ষণিক। অপেক্ষায় আছে তার স্মিতা আসবে বলে। অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ক্ষণিকের হাত-পা ঠান্ডা বরফ হয়ে গেলেও স্বপ্ন বুনতে অস্থির থাকে ক্ষণিক। তার স্মিতা আসবে। প্রথমে কি বলে স্বাগত জানাবে? কীভাবে স্মিতাকে ভালবাসার কথা বলবে? স্মিতাকে নিয়ে কোন হোটেলে গিয়ে নাস্তা করবে? নাকি বুড়িগঙ্গাতে নৌ-ভ্রমণে বের হবে? কবে ওকে নিজের ঘরে নিতে পারবে? তারপর কোথায় ওরা হানিমুনে যাবে? ইত্যাদি ইত্যাদি ভাবনা ক্ষণিকের অপেক্ষার প্রহরটা দীর্ঘায়িত মনে করতে দেয়নি। সম্বিত ফিরে পায় মোবাইলের অ্যালার্ম বেজে ওঠার শব্দে। প্রতিদিন ক্ষণিক সকাল ৮টায় ঘুম থেকে ওঠার জন্য মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়েছিল। পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল চোখের সামনে নিয়ে অ্যালার্মটা বন্ধ করে দেয়। বিশ্বাস করতে পারে না নিজেকে। সামনে তাকায়। সূর্যটা উঁকি ঝুঁকি মারে তার আলোকে পৃথিবীতে পাঠানোর জন্য। কিন্তু কুয়াশার চাদর তাকে পাহারা দেয়। পথ আগলে বসে থাকে।
ক্ষণিকের মনে নানা প্রশ্ন জাগ্রত হয় স্মিতার জন্য। কেন স্মিতা আসেনি? ক্ষণিকের মোবাইলটা বেজে ওঠে। রিং টোনটা খুব পরিচিত। কেননা স্মিতার জন্য আলাদা রিং টোন সেট করে রেখেছিল ক্ষণিক। স্মিতা ফোন করেছে। তাড়াহুড়ো করে মোবাইলটা পকেট থেকে বের করতেই হাত ফসকে বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে পড়ে যায়। মনের অজান্তেই বুকের বাম পাশে ছোট একটি দাগ কেটে যায় ক্ষণিকের। ফিরে আসতে চেষ্টা করে আপন ঠিকানায়। পথিমধ্যে ফোনের দোকান থেকে স্মিতাকে ফোন দেয়। ও পাশ থেকে একটিই জবাব 'আপনি যে নম্বরে ফোন করেছেন তা এই মুহূর্তে বন্ধ আছে। অনুগ্রহপূর্বক একটু পর আবার চেষ্টা করুন।"
আদ্যপ্রান্ত ভাববার সময় ক্ষণিকের নেই। যেভাবেই হোক স্মিতার সাথে দেখা করা প্রয়োজন। ছুটে চলে স্মিতাদের বাসায়। দরজায় বড় একটি তালা ঝুলতে দেখা যায়। ছোট মা মেরিনা পারভীনের বাসায় যায় ক্ষণিক। ছোট মাকে জিজ্ঞাসা করে স্মিতা সম্পর্কে। কোন জবাব না দিয়ে হাতে একটি হলুদ খাম দিয়ে বলেন
: এটি তোমার জন্য, নাজু ইসলাম দিয়েছেন। বাসায় গিয়ে মাথা ঠান্ডা করে পড়বে।
সুবোধ বালকের মতো খামটা হাতে নিয়ে বাসায় ফিরে আসে ক্ষণিক। রীতিমত বারান্দায় যায়। ক্ষণিকদের ফ্লাটের বারান্দায় রাখা ইজি চেয়ারে বসে। হলুদ খামটা বুকের হৃৎপিন্ডের কাছে শরীরের সাথে ইজি চেয়ারের তালে তালে দোল খায়। বেশ কিছুটা সময় ইজি চেয়ারের সাথে নিজেকে সপ্ত আসমানের কল্পলোকে ভাসিয়ে দেয় একটি দীর্ঘশ্বাসের মাধ্যমে। ডান হাতটা আলতোভাবে হৃৎপিন্ডের ওপর থেকে হলুদ খামটাকে নিয়ে আসে। খামের এপাশ ওপাশ চোখ বুলায়। কোথাও কিছু লেখা নেই। খামের এক কোণা ছিঁড়ে একটি ভাঁজ করা সাদা কাগজ বের করে। যাতে বেশ কয়েকটি স্ট্যাপলার পিন লাগানো আছে। খামটা পাশে রেখে কাগজের পিনগুলো খোলার চেষ্টা করে। মনের অজান্তেই একটি পিনের খোঁচা লেগে ক্ষণিকের আঙুলের সাথে রক্তের একটি কুন্ডলী তৈরি হয়। পিন থেকে কাগজ উন্মুক্ত করে। সাদা কাগজ। কোন পাশেই লেখা দেখতে পায় না ক্ষণিক। মনের দু:খে সাদা কাগজ ছুঁড়ে ফেলে দেয় বারান্দার এক কোণে। হৃদয়ের কোণে রক্তক্ষরণ হয়। আঙুলের রক্তের কুন্ডলীর দিকে চোখ যায় ক্ষণিকের। আঙুলের রক্ত কপালে লাগাতে লাগাতে মনে মনে আওরাতে থাকে -
সাদা কষ্টের মাঝেও লাল রং থাকে। তোমার দেওয়া কষ্টগুলো আমার সৌভাগ্যের রাজটীকা হয়ে থাকুক।
দু' চোখ বন্ধ করে ইজি চেয়ারে দোল খায় ক্ষণিক। ওর কাছে পৃথিবীর নিস্তব্ধতা ধরা দেয়। রক্তের ফোঁটা কাগজে পরার শব্দ শুনতে পায় ক্ষণিক। শব্দটি আরো জোরে শোনা যায়। ক্ষণিক মনে করে হৃদয়ে বুঝি রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। কিন্তু না, বাস্তবে চোখ মেলে দেখে স্মিতার দেওয়া সাদা কাগজের ওপর বারান্দায় নেড়ে দেওয়া প্যান্টের পানি ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ছে। কী অদ্ভুত এক শব্দ! একবারে ক্ষণিকের হৃদয়ের দরজায় কড়া নেড়ে জানিয়ে দেয় তোমার স্মিতা এক পবিত্রতার নাম। সাদার মূল্যায়ন তো পবিত্রতার মাপকাঠি। মনের মধ্যে সাদা আর পবিত্রতা শব্দ দুইটি কয়েকবার আওড়ায় ক্ষণিক। তারপর স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সাদা চিঠিটা লেখায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। স্মিতা যে ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি তা স্পষ্টই বুঝতে পারে ক্ষণিক। এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত লেখা পানিতে দিলে সহজেই চোখে পড়ে তা আগেই জানা ছিল ক্ষণিকের। আলতো হাতে চিঠিটা চোখের সামনে তুলে ধরে ক্ষণিক।
"কি বলে সম্বোধন করবো বুঝে উঠতে পারছি না। তাই তো সম্বোধন ছাড়াই লিখতে বসেছি। ভুল হলে ক্ষমা করে দিও। তোমার সাথে দেখা করার ভীষণ ইচ্ছা ছিল। কিন্তু একান্তই বিপদে পড়ে যেতে পারিনি। হয়ত তুমি অপেক্ষা করতে অনেক কষ্ট করেছো। দু:খ করো না আমিও ছটফট করেছি তোমার সাথে দেখা করার জন্য। আমি জানি তুমি আমাকে অনেক বেশী ভালবাস। তোমার ভালবাসার কাছে আমি হেরে গেছি। আমি পারিনি তোমার অবস্থানে থেকে তোমাকে ভালবাসতে। অথচ দেখো, আমার অবস্থান থেকে তোমাকে ঠিক ভালবাসার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা কেন ভাবছো? চেষ্টাই তো। যে ভালবাসা প্রকাশের নয়, তা কি সত্যিকার ভালবাসা হতে পারে? পারে না। আমিও পারি না তোমাকে ভালবাসতে। কেননা ............. । এই কথাটি এত সহজে বলতে পারছি না। ক্ষমা করো। এই যাহ্ ! তোমাকে চিন্তার মধ্যে ফেললাম, তাই না? আর চিন্তায় ফেলবো না। কোনদিন না। অনেক দিন থেকে মনের সাথে যুদ্ধ করছি তোমাকে আমার জীবনের সব কিছু জানানো দরকার। কিন্তু বলতে পারছি না। বুঝলাম তোমার সামনে দাঁড়িয়ে হয়ত সে কথা কখনও বলতে পারবো না। তাই এই লুকোচুরি। মনকে শক্ত করো ক্ষণিক। খুব বেশি শক্ত করো। আমি ...... আমি ..... আমি বিবাহিত। স্বামীর সাথে আজ চিটাগাং যাচ্ছি। আমার স্বামীর সাথেও তোমার বিষয়টি আলাপ করেছি। উনি বড় ভাল মানুষ। আমার পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছিলাম উনার পক্ষ থেকে। তোমার ক্ষতি আমি কখনো চাই না। তোমার কষ্ট আমাকে অনেক পীড়া দেয়। তোমাকে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমাকে ভুলে যেও। পারলে ক্ষমা করে দিও। অন্য কোন মেয়েকে ভালবেসো। ভালবাসার বিকল্প নেই। আমার জন্য তোমার জীবন থেমে থাক তা আমি কখনোই চাই না। তবে একটি অধিকার চাই। আমাকে যদি এক মুহূর্তের জন্যেও ভালবেসে থাকো, সেই ভালবাসার অধিকার নিয়ে বলছি। আমি তোমার স্মিতা হয়েই বেঁচে থাকতে চাই।
- তোমারই
স্মিতা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তানজির হোসেন পলাশ আপনকে ধন্যবাদ আমার গল্প পড়ার জন্য /
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১২
তানজির হোসেন পলাশ সুমি অপু অনেক অনেক ধন্যবাদ.
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১২
এম এম এস শাহরিয়ার মনে হয় এত সুন্দর লিখা আর কখনই পড়িনি ......... শুভ কামনা রইলো ..
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১২
সুমননাহার (সুমি ) ভালো লাগলো তাই....................
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১২
মিজানুর রহমান রানা মহানুভবতার জন্যে বিশাল ধন্যবাদ ও শুভ কামনা।
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১২
তানজির হোসেন পলাশ মিজানুর রহমান রানা ভাই গল্পটি আপনার ছেলে স্বপ্নিলকে উত্সর্গ করলাম.
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১২
মিজানুর রহমান রানা বেশ সুন্দর গল্প ফেঁদেছেন। স্বপ্নীল আমার ছেলের নাম। যাই হোক গল্পটি বেশ হয়েছে। শুভ কামনা থাকলো
তানজির হোসেন পলাশ অনেক দিন হাসপাতালের বিছানায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে থেকেছি বলে কাউকে ধন্যবাদ জানাতে পারিনি বলে দুকখিত /
মামুন ম. আজিজ পরকীয়ার টান...সূতো শেষে ছিড়ে দিয়ে লেখক এক শুদ্ধ মনের স্মিতাকে ভেবেছেন। বেশ।
ভালো লাগেনি ২২ জানুয়ারী, ২০১২
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম ভাল একটা প্রেমের গল্প । লেখকের জন্য শুভ কামণা ।
ভালো লাগেনি ২১ জানুয়ারী, ২০১২

২২ নভেম্বর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪